ভাল রডের বৈশিষ্ট।
রড, ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায় একে রিইনফোর্সমেন্ট বলা হয়। সোজা ভাষায় অনেেকে এটিকে বিল্ডিং এর হাড় বা বোন বলে থাকেন। আসুন জানি রড সম্পর্কিত কিছু খুটিনাটি বিষয়াদি।
.
১) রড
আমাদের দেশে যে রড গুলো পাওয়া যায় এগুলোকে টেকনিক্যাল ভাষায় বলা হয়ে থাকে কার্বন স্টিল। সহজ ইংরেজিতে এটাকে Rebar বলা হয়। রড ব্যাবহার করা হয় মুলত বিল্ডিং এর উৎপন্ন টেনশন স্ট্রেস সুরক্ষা করার জন্য। এবং এই স্ট্রেস বের করার জন্য সুন্দর কিছু ক্যালকুলেশন আছে যা সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা বের করে থাকেন। এই সেই অনুসারে রড এর পরিমান নির্ধারন করে থাকেন। তাই ভবন নির্মান করার পুর্বে আপনার বিল্ডিং এর ঠিক কতটুকুন রড লাগবে সেটার পরিমান বের করার দায়িত্ব মিস্ত্রিকে না দিয়ে একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ারকে দিন।
.
রড কেনার আগে স্পেসিফিকলি ঠিক কত মিলির কত টন রড লাগবে তার হিসেব করে নিন। মনে রাখবেন একেবারে ব্লাইন্ড মানে অন্ধের মতন রড কেনা শুরু করবেন না। এটা একটা মস্ত বড় ভুল। পুরো বাড়িটি নির্মান করতে বা যতটুকন নির্মান করবেন ঠিক ততটুকুন রড এর সঠিক এস্টিমেট করিয়ে নিন ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে। কেন করবেন? কারন এতে ওয়েস্টেজ কম হবে। কখনোই মিস্ত্রিকে জিজ্ঞেস করবেন না যে আপনার কতটুকুন রড লাগবে। তারা আন্দাজে একটু বেশি করে বলে ফেলে। এটা আপনার টোটাল বাজেটের উপরে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
.
রড কেনার সময় জেনে নিন কোন মিলিমিটিার ডায়ার রড ঠিক কত টন লাগবে। সাধারন ৫ থেকে ৬ তলা পর্যন্ত ১০ মিলি, ১২ মিলি, ১৬ মিলি এবং সর্বোচ্চ ২০ মিলিমিটার রড লাগে। এছারা ২২ মিলি, ২৫ মিলি হয়ে ৫০ মিলি রড পর্যন্ত আছে। সাধারনত ৪০ গ্রেড, ৬০ গ্রেড এবং ৭৫ গ্রেড এর রড পাওয়া যায়। এছারা আছে ৫০০ওয়াট, এক্সট্রিম সহ আরো কিছু স্পেসিফিকেশন। যদি আপনার বাড়িটি ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা ডিজাইন করে থাকেন তবে তিনিই বলে দেবেন ঠিক কোন গ্রেডের রড ব্যাবহার করতে হবে। মিস্ত্রিরা সাধারন ৪০ গ্রেড এবং ৬০ গ্রেড এর বেশি নিতে চায় না কারন এর বেশি রডগুলো হার্ডনেস একটু বেশি এবং তাদের কাজ করতে অসুবিধে হয়। তবে টিক কোন রডটি আপনার বাড়ির জন্য উপযুক্ত তার সিদ্ধান্ত একজন ইঞ্জিনিয়ারই দিতে পারবেন।
.
এবার আসুন রড কেনার আগে রডের কিছু স্পেসিফিক্যাশন সম্পর্কে জানি। বাজারে বিভিন্ন কম্পানির বিভিন্ন ধরনের রড পাওয়া যায়।
বিএসআরএম, কেএসআরএম, আরএসআরএম এবং একেএস। এই কম্পানিগুলো এখন বর্তমানে একেবারে টপে রয়েছে। এছারা বুয়েট এর অত্যাধুনিক ল্যাবে এই কম্পানিগুলো রডের রিপোর্ট সবচেয়ে ভালো। রড কেনার আগে জেনেনিবেন সবগুলো কম্পানির রডের দাম। কারন বাংলাদেশে ডলারের দামের মতন রডরে দাম ক্ষনে ক্ষনে আপ ডাউন করে। আজ যদি একটা থাকে তবে কাল আবার অন্যটা হয়। আর রড কেনার সময় খেয়াল করুন রডের কম্পানি এবং লোকাল ডিলারের দামের ব্যাবধান কতটুকুন।
.
বিএসআরএম(বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিল লিমিটেড):- এই কম্পানিটি বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রড ম্যানুফ্যাকচার করে। চট্টগ্রামের বেশকয়েকটি স্থানে তাদের সুবিশাল সব ফ্যাক্টরি রয়েছে। এর মধ্যে ভাটিয়ারির ফ্যাক্টরিটি দক্ষিনএশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধুনিক ফ্যাক্টরি। মানের দিকদিয়ে এরা অনন্য। এই কম্পানিটির রড বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রয় হয়। এটা মুলত এদের বাজারে ডিমান্ড বেশি থাকার কারনে হয়। ঢাকায় এই কম্পানির উত্তরা জসিমউদ্দিন এবং পল্টনে দুইটি অফিস রয়েছে, এছারা সোনারগাওতে ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশে রয়েছে সুবিশাল গোডাউন। এদের রড কেনার আগে কম্পানির দাম দেখে নেবেন কারন বাজারে কৃত্তিম সংকট সৃস্টি করে মাঝে মধ্যে দাম বাড়ানোর ঘটনা ঘটে।
.
কেএসআরএম (কবির স্টিল রি-রোলিং মিল লিমিটেড):- মোটামুটি দ্বিতিয় পজিশনে আছে এই কম্পানিটি। এদের রডের কোয়ালিটি বিএসআরএম এর প্রায় সমান। তবে দামে এরা অনেকটা কম। দেখা যায় টন প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মতন কম থাকে বিএসআরএম থেকে। কেনার আগে কম্পানির মুল দাম জেনে নেবেন। অনেক লোকাল দোকানদার বিএসআরএম এবং কেএসআরএম একই দামে বিক্রিকরে থাকনে। কিন্তু বাস্তবে এই কম্পানির রডের দাম বেশ কম থাকে। এবং এরা মানের দিকথেকেও অনেক ভালো।
.
আরএসআরএম( রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিল লিমেটেড):- এই কম্পানিটির নাম শুনলেই অনেকেই কিছুটা চোক বাকিয়ে তাকান। তবে আসরে এই কম্পানিটি সত্যিকার অর্থেই অসাধারন কোয়ালিটির রড বানায়। তবে এদের মার্কেটিং কিছুটা ঘাটতি থাকার দরুন অতটা পরিচিত হয়নি। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এদের নিজস্ব শিপব্রেকিং ইয়ার্ড আছে যার মানে হচ্ছে এদের স্ক্রাপ গুরো একেবারে সলিড হয়ে থাকে। তাছারা এদের কোয়ালিটি অনুসারে দাম অনেক সাশ্রয়ি। বাজারে এত সুন্দর কোয়ালিটির রড এত কম দামের একমাত্র এই কম্পাটিই দিয়ে থাকে।
.
একেএস( আবুল খায়ের স্টিল):- রড এর জগতে এরা বেশ নতুন হলেও মানে দিক দিয়ে বেশ বালো। এদের অত্যাধুনিক ফ্যাক্টরি রড এর কোয়লিটি ধরে রাখার চেস্টা করে। তাছারা বাজারে এই কম্পনির রড এর সরবরাহ ভালো থাকে তাই দামে সাশ্রয়ি হয়ে থাকে। যদি আপনি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সাপ্লাই চান তবে এই কম্পানি আপনার আশাহত করবে না।
.
এছারাও বাজারে আনোয়ার স্টিল, বন্দর স্টিল, বায়জিদ স্টিল, চাকদা স্টিল সহ বেশ কিছু কম্পানি আছে। রড কেনার পরে ডেলিভারি নেয়ার সময় আপনার প্রজেক্টর এর রাস্তার সাইজ দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন সোজা রড নেবেন নাকি ভাজ করা রড নেবেন। সোজা রড নিলে সেগুলো সোজা করার জন্য মিস্ত্রিদের আলাদা সময় নস্ট করতে হবে না কাজ দ্রত হবে। আর ভাজ করা রড নিলে সেগুলো সোজা করতে আলাদা ভাবে সময় নস্ট হয় এবং অনেক সময় মিস্ত্রিরা সঠিক ভাবে ভাজ না করেই রড কেটে ফেলে। তবে সোজা রড এর গাড়ি হয় অনেক বড় যা ছোট রাস্তায় প্রবেশ করে না।
.
এছারা ছোটখাট দুর্ঘটনা এরানোর জন্য রড ডেলিভারি দেয়ার সময় রডের মাথায় ক্যাপ আছেকিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। ক্যাপ অনেক সময় হাত পা কেটে ছিরে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং আনলোডিং এর সময় এবং কাজের সময় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে।
.
রডের ওজন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
১০মিলি :- প্রতি ফিটে ওজন ০.১৮৭ কেজি
১২ মিলি:- প্রতিট ফিটে ওজন ০.২৭ কেজি
১৬ মিলি:- প্রতি ফিটে ওজন ০.৪৮ কেজি
২০ মিলি:- প্রতি ফিটে ওজন ০.৭৫ কেজি
২২ মিলি:- প্রতি ফিটে ওজন ০.৯০ কেজি
.
এখন আপনার কত বান্ডিল রড আসলো এবং প্রতিটি রড এর লেন্থ আছে কত ফিট তা জানলে আপনি খুবই সহজে রডের ওজন বের করে ফেলতে পারবেন।
Leave a Reply
Want to join the discussion?Feel free to contribute!